২৫ বছর বয়সে চুল পড়া (hair fall at 25) এখন অনেক ছেলের সাধারণ সমস্যা। আগে মনে করা হতো চুল পড়া ৪০-৫০ বছর পর হয়, কিন্তু এখন ২৪-২৫ বছর বয়সেই অনেকে মাথার চুল হারাচ্ছে।
আপনিও যদি এই সমস্যায় পড়েন, চিন্তা করবেন না—আপনি একা নন।
চুল পড়ার বড় কারণগুলোর মধ্যে মানসিক চাপ অনেক বড় ভূমিকা রাখে। জীবন এখন খুব ব্যস্ত, অনেকেই চাকরি, পড়াশোনা, সম্পর্ক ও ভবিষ্যতের চিন্তায় স্ট্রেসে থাকে। এই মানসিক চাপ শরীর ও চুলের উপর প্রভাব ফেলে।
আজকাল আমরা বাইরের ফাস্ট ফুড বেশি খাই, আর ঘরের পুষ্টিকর খাবার কম। প্রোটিন, ভিটামিন B12, ভিটামিন D, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদির অভাবে চুল দুর্বল হয়ে যায় ও পড়ে যায়।
বংশগত কারণও অনেক বড় কারণ। যদি বাবার বা দাদার অল্প বয়সে টাক পড়ে থাকে, তাহলে আপনারও সেই সম্ভাবনা থেকে যায়। এটা সাধারণত কপালের দিক থেকে বা মাথার উপরের দিক থেকে শুরু হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে হরমোন পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে DHT (Dihydrotestosterone) নামক হরমোন চুলের গোড়া ছোট করে দেয়, যার ফলে চুল পড়ে যেতে শুরু করে। এটা অনেক ছেলেদের মধ্যে ২৫ বছরেই শুরু হয়।
আরেকটি কারণ হলো দূষণ ও জল। শহরের অনেক জায়গায় জলের গুণমান খারাপ। ধুলোবালি, দূষিত বাতাস এসব মাথার স্ক্যাল্পে ক্ষতি করে, যার ফলে চুল পড়ে।
অনেক ছেলেই হেয়ার স্টাইলিং জেল, ওয়াক্স, হেয়ার স্প্রে বা হিটিং মেশিন ব্যবহার করে। এসব জিনিস দীর্ঘদিন ব্যবহারে চুল দুর্বল হয়ে যায়। টাইট হেয়ারস্টাইল বা ঘনঘন শ্যাম্পু করাও চুলের ক্ষতি করতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যাও চুল পড়ার বড় কারণ হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, আয়রনের ঘাটতি, অথবা কোনো অটোইমিউন ডিজিজ। এমনকি ডেঙ্গু বা কোভিডের পরেও অনেকে চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন।
প্রতিদিন ৫০-১০০ চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি মাথায় খালি জায়গা দেখা যায়, চুল পাতলা হয়ে যায়, বা হেয়ারলাইন পেছাতে থাকে, তখন সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।
চুল পড়া রোধ করতে চাইলে প্রথমে খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। ডিম, ডাল, দুধ, বাদাম, শাকসবজি এসব নিয়মিত খেতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, হাঁটা বা ধ্যান সাহায্য করতে পারে। চুলে সপ্তাহে একবার নারকেল তেল লাগানো, আর সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করাও ভালো। খুব বেশি হেয়ার প্রোডাক্ট বা হিটিং মেশিন ব্যবহার না করাই ভালো।
পরিষ্কার জল দিয়ে চুল ধোয়া উচিত। দূষণ থেকে মাথা ঢেকে রাখা বা স্কার্ফ পরা ভালো। যদি এত কিছু করার পরও চুল পড়া না কমে, তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াই ভালো। তারা সঠিক চিকিৎসা বা ওষুধ দিতে পারবেন।
চুল পড়া কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়ও আছে। নারকেল তেল, পেঁয়াজের রস, বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। সপ্তাহে ২-৩ দিন হালকা গরম জলে চুল ধোয়া ভালো।
অনেকেই ভাবে ছোট করে চুল কাটলে চুল পড়া কমে যাবে, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। হেলমেট পড়লে টাক পড়ে—এটাও ভুল। শুধু বয়স্কদেরই চুল পড়ে এমন ধারণাও ঠিক নয়। এখন অনেক কম বয়সেই ছেলেরা এই সমস্যায় পড়ছে।
২৫ বছর বয়সে চুল পড়া (hair fall at 25) এখন খুব সাধারণ, কিন্তু সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো যায়। সঠিক খাবার, ঘুম, চাপমুক্ত থাকা, চুলের যত্ন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ—এই কয়েকটি জিনিস মানলেই আপনি আপনার চুলকে আবার আগের মতো রাখতে পারবেন।
